اَلْحَمْدُ لِلَّهِ وَحْدَهُ وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى مَنْ لَا نَبِيَّ بَعْدَهُ، وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ، أَمَّا بَعْدُ :
প্রিয় মুসলিম ভাই ও বন্ধুগণ! বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমত-করুণার মধ্যে একটি হলো যে তিনি সকল অকল্যাণ ও অশ্লীলতার দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি তাদের জন্য সুরক্ষার পর্দা নামিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর যে ব্যক্তি এ পর্দা ভেদ করবে অথবা উন্মুক্ত করবে সে সীমালঙ্ঘন ও পাপে নিপতিত হবে। সে তাকওয়ার পোশাক বর্জন করে অকল্যাণে লিপ্ত হবে। কবির ভাষায় :
إِذَا الْمَرْءُ لَمْ يَلْبَسْ ثِيَاباً مِنْ التُّقَى
تَجَرَّدَ عُرْيَاناً وَإِنْ كَانَ كَاسِياً
وَ خَيْرُ خِصَالِ الْمَرْءِ طَاعَةُ رَبِّهِ
وَلَاخَيْرَ فِيْمَنْ كَانَ لِلَّهِ عَاصِياً
ব্যক্তি যদি না পরে তাকওয়ার পোশাক
হলো সে তবে নিরাবরণ উলঙ্গ, হোক না সে পোশাক পরিহিত
রবের আনুগত্য বান্দার সর্বোত্তম গুণ
আর যে পাপী সে তো সকল কল্যাণ থেকে শূন্য।
পাপের পথ বন্ধ করে দেয়াকে আলিমগণ سَدُّ الذَّرَائِعِ‘মাধ্যমসমূহ বন্ধ করে দেয়া’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। যা কিছু পাপের পথে নিয়ে যায়, পাপে লিপ্ত হওয়ার জন্য হাতছানি দিয়ে ডাকে সেসব পথ-পথান্তর মাধ্যম ও উসিলাও শরীয়তের দৃষ্টিতে রুদ্ধ। অর্থাৎ সেদিকে পা বাড়ানো যাবে না। তবে যদি সর্বশেষ ঠিকানায় শরীয়তের কোনো স্বীকৃত স্বার্থ নিহিত থাকে তবে তা উন্মুক্ত বলে বিবেচিত। এর বিপরীতে তাতে যদি এ জাতীয় কোনো স্বার্থ নিহিত না থাকে তবে তা চিরতরে রুদ্ধই থেকে যায়, কখনো উন্মুক্ত হয় না।
প্রিয় হাযেরীন! বর্তমানে পর্দাহীতা যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা সত্যিই উদ্বেগজনক। নারীরা আজ বেপর্দায় যত্রতত্র ঘুরে বেড়াচ্ছে। পুরুষের সাথে অবাধে পর্দাহীনভাবে দেখা-সাক্ষাৎ করছে। পরপুরুষকে আকৃষ্ট করার জন্য সৌন্দর্য প্রকাশে তারা পরস্পরে প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এরূপ করা নিঃসন্দেহে প্রকাশ্য সীমালঙ্ঘন, বড় মুনকার ও গুনাহ এবং আল্লাহর গযব নাযিল হওয়ার কারণ। পর্দাহীনতার এই ঘৃণ্য ও অশুভ কালচারের পরিণতি হলো অশ্লীলতা প্রকাশ্য রূপ ধারণ করা। নারীকেন্দ্রিক নানা ধরণের অন্যায়-অপরাধ বেড়ে যাওয়া। লজ্জা-শরম বিদায় নেয়া ও দুষ্কর্ম ব্যাপক আকার ধারণ করা।
অতএব হে মুসলমান ভাইয়েরা! আসুন আমরা আল্লাহর শেখানো আদবে মুআদ্দাব হই। আল্লাহর দেয়া বিধান মেনে চলি। আর আমাদের নারীদেরকে হিজাব ও জিলবাবের নির্দেশ দিই। কেননা পর্দা হলো পবিত্রতার উপায়। নাজাত ও নিরাপত্তার উপায়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
{يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ قُلْ لِأَزْوَاجِكَ وَبَنَاتِكَ وَنِسَاءِ الْمُؤْمِنِينَ يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلَابِيبِهِنَّ ذَلِكَ أَدْنَى أَنْ يُعْرَفْنَ فَلَا يُؤْذَيْنَ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا}
‘হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রীদেরকে, কন্যাদেরকে ও মুমিনদের নারীদেরকে বল, ‘তারা যেন তাদের জিলবাবের কিছু অংশ নিজেদের ওপর ঝুলিয়ে দেয়, তাদেরকে চেনার ব্যাপারে এটাই সবচেয়ে কাছাকাছি পন্থা হবে। ফলে তাদেরকে কষ্ট দেয়া হবে না। আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আল আহযাব : ৫৯)।
এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা جَلَابِيْبْ শব্দ ব্যবহার করেছেন। জালাবীব جِلْبَابْ এর বহুবচন। জিলবাব হলো নারী তার মাথা হতে পর্দা করার উদ্দেশ্যে যা ঝুলিয়ে দিয়ে সমগ্র শরীরকে ঢেকে নেয়। আল্লাহ তাআলা সকল মুমিন নারীকে তাদের আকর্ষণীয় ও স্পর্শকাতর স্থানে যেমন বক্ষ, গলা ইত্যাদির ওপর জিলবাব টেনে দিতে বলেছেন। যাতে মুমিন নারীরা যে পূতপবিত্র তা বুঝা যায় এবং তারা ফিতনা ও হয়ারানী থেকে রেহায় পায়।
তাই হে মুমিনগণ! সমাজে যারা নির্বোধ ও বখাটে তাদেরকে কঠোরভাবে দমন করুন। নারীদের জন্য আল্লাহ তাআলা যেসব বিষয় হারাম করে দিয়েছেন, তা থেকে তাদেরকে বারণ করুন। নারীদেরকে পর্দায় রাখুন। আল্লাহর গযব ও শাস্তিকে ভয় করুন। একটি সহীহ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্পষ্ট বর্ণনায় বলেছেন :
(إِنَّ النَّاسَ إِذَا رَأَوْا الْمُنْكَرَ فَلَمْ يُغِّيِروه، أَوْشَكَ أَنْ يَعُمَّهُمُ اللَّهُ بِعِقَابِهِ)
‘ মানুষ যখন অন্যায়কর্ম দেখে অথচ তা পরিবর্তন করে না, খুবই আশঙ্কা রয়েছে যে আল্লাহ তাদের সবার ওপর তাঁর শাস্তি ব্যাপক করে দেবেন’ (আহমাদ, সহীহ)।
অন্যায় প্রতিহত না করা একটি মারাত্মক অপরাধ। বনী ইসরাঈলের মাঝে সংঘটিত অন্যায়কর্মে বাধা না দেয়ার কারণেই বনী ইসরাঈলের প্রতি লানত-অভিসম্পাত এসেছে। কুরআন মাজীদে ইরশাদ হয়েছে :
{لُعِنَ الَّذِينَ كَفَرُوا مِنْ بَنِي إِسْرائيلَ عَلَى لِسَانِ دَاوُدَ وَعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ ذَلِكَ بِمَا عَصَوْا وَكَانُوا يَعْتَدُونَ كَانُوا لا يَتَنَاهَوْنَ عَنْ مُنْكَرٍ فَعَلُوهُ لَبِئْسَ مَا كَانُوا يَفْعَلُونَ}
‘ বনী ইসরাঈলের মধ্যে যারা কুফরী করেছে তাদেরকে দাঊদ ও মারইয়াম পুত্র ঈসার মুখে লানত করা হয়েছে। তা এ কারণে যে, তারা অবাধ্য হয়েছে এবং তারা সীমালঙ্ঘন করত। তারা পরস্পরকে মন্দ থেকে নিষেধ করত না, যা তারা করত। তারা যা করত, তা কতইনা মন্দ! (সূরা আল-মায়েদা : ৭৮-৭৯)।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সহীহ হাদীসে আরো এসেছে :
(مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِلِسَانِهِ، فَإِنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَبِقَلْبِهِ، وَذَلِكَ أَضْعَفُ الإِيمَانِ)
‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি কোনো অন্যায়কর্ম দেখবে সে যেন তা হাত দিয়ে পরিবর্তন করে দেয়। আর যদি না পারে তবে জিহ্বার ব্যবহারে। আর যদি তাও না পারে তবে অন্তর দিয়ে। আর এটা হবে দুর্বলতম ঈমান’ (মুসলিম)।
সুপ্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আল্লাহ তাআলা তাঁর পবিত্র কিতাবে নারীদেরকে পর্দা করতে বলেছেন। ঘরে অবস্থান করতে বলেছেন। তিনি তাদের বেপর্দা হতে নিষেধ করেছেন। পরপুরুষের সাথে কোমল কন্ঠে কথা বলতে বারণ করেছেন। তাঁর এ আদেশ-নিষেধাজ্ঞা নারীদের সুরক্ষার জন্যই দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন :
{يَا نِسَاءَ النَّبِيِّ لَسْتُنَّ كَأَحَدٍ مِنَ النِّسَاءِ إِنِ اتَّقَيْتُنَّ فَلا تَخْضَعْنَ بِالْقَوْلِ فَيَطْمَعَ الَّذِي فِي قَلْبِهِ مَرَضٌ وَقُلْنَ قَوْلاً مَعْرُوفاً وَقَرْنَ فِي بُيُوتِكُنَّ وَلا تَبَرَّجْنَ تَبَرُّجَ الْجَاهِلِيَّةِ الأُولَى وَأَقِمْنَ الصَّلاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ}
‘হে নবীপত্নিগণ, তোমরা অন্য কোন নারীর মত নও। যদি তোমরা তাকওয়া অবলম্বন কর, তবে (পরপুরুষের সাথে) কোমল কণ্ঠে কথা বলো না, তাহলে যার অন্তরে ব্যাধি রয়েছে সে প্রলুব্ধ হয়। আর তোমরা ন্যায়সংগত কথা বলবে। আর তোমরা নিজ গৃহে অবস্থান করবে এবং প্রাক- জাহেলী যুগের মত সৌন্দর্য প্রদর্শন করো না। আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর। হে নবী পরিবার, আল্লাহ তো কেবল চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতাকে দূরীভূত করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে’ (সূরা আল আহযাব : ৩২-৩৩)।
আল্লাহ তাআলা নবী-পত্নিদেরকে, যারা হলেন উম্মাহাতুল মুমিনীন বা মুমিনদের মা এবং নারীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও পবিত্রতম, তাদেরকেই কোমল কণ্ঠে পরপুরুষের সাথে কথা বলা নিষেধ করে দিয়েছেন। কেননা কোমল কণ্ঠে ইনিয়ে-বিনিয়ে কথা বললে, যারা যিনা-ব্যাভিচারের ব্যাধিসম্পন্ন হৃদয়ের অধিকারী তাদের অন্তরে লোভ সৃষ্টি হবে। তারা ধারণা করবে যে এরূপ কোমল কণ্ঠে কথা বলার অর্থ হলো অন্যায় কাজে লিপ্ত হতে রাজি থাকা।
আল্লাহ তাআলা নারীদেরকে ঘরে অবস্থান করতে বলেছেন। জাহেলীযুগের মতো সৌন্দর্য প্রকাশ করতে নিষেধ করেছেন। যেমন মাথা উন্মুক্ত রাখা, ঘাড় উন্মুক্ত রাখা, বক্ষ উন্মুক্ত রাখা, বাহু ও পায়ের নলা উন্মুক্ত রাখা এবং এ জাতীয় অন্যান্য সৌন্দর্যের জায়গা নিরাবরণ বা উন্মুক্ত করে দেয়া, যা পুরুষদের উত্তেজিত ও প্রলুব্ধ করে এবং পাপে লিপ্ত হতে আগ্রহী করে তোলে।
আল্লাহ তাআলা যদি পূতপবিত্র উম্মাহাতুল মুমিনীনকে এ জাতীয় নির্দেশ দিয়ে থাকেন, তবে অন্যান্য নারীদের প্রতি আল্লাহর তাআলার এ নিষেধাজ্ঞা আরো কঠিনভাবে বর্তানোই স্বাভাবিক। কেননা অন্য নারীদের ফেতনার আশঙ্কা তো আরও বেশি। আল্লাহ তাআলা আমাদের নারীদেরকে সকল প্রকার ফেতনা ও হয়রানী থেকে হিফাযত করুন। উল্লিখিত আয়াতের নির্দেশমালায় অন্যান্য নারীরাও যে শামিল তা নিচের আয়াত থেকে অত্যন্ত স্পষ্টভাবে বুঝা যায়। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
{وَأَقِمْنَ الصَّلاةَ وَآتِينَ الزَّكَاةَ وَأَطِعْنَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ}
‘ আর তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর’ (সূরা আল আহযাব : ৩৩)।
এ নির্দেশগুলো নবী-পত্নি ও অন্যান্য সাধারণ নারী সবার জন্যই সমান, তাই পর্দার নির্দেশ ও ঘরে অবস্থানের নির্দেশ, যা এ আয়াতের শুরুর অংশে উল্লিখিত হয়েছে, তাও ব্যাপক হওয়াই স্বাভাবিক।
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন :
{وَإِذَا سَأَلْتُمُوهُنَّ مَتَاعاً فَاسْأَلوهُنَّ مِنْ وَرَاءِ حِجَابٍ ذَلِكُمْ أَطْهَرُ لِقُلُوبِكُمْ وَقُلُوبِهِنّ}
‘আর যখন নবীপত্নিদের কাছে তোমরা কোন সামগ্রী চাইবে তখন পর্দার আড়াল থেকে চাইবে এটি তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্র’ (সূরা আল আহযাব : ৫৮)।
পরপুরুষ থেকে নারীরা পর্দার আড়ালে থাকার ব্যাপারে এ আয়াতের বক্তব্য দ্ব্যর্থহীন। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা এও ব্যক্ত করেছেন যে, পর্দার আড়ালে থাকা নারী-পুরুষ উভয়ের হৃদয়কে পবিত্র রাখে। অশ্লীলতা ও অশ্লীলতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়, এমন সব কারণ ও মাধ্যম থেকে উভয়কে হিফাযত করে। উল্লিখিত আয়াতে এ দিকেও ইঙ্গিত রয়েছে যে নারীর খোলামেলা চলাফেরা ও পর্দাহীনতা একটি অশ্লীল ও ঘৃণ্য বিষয় যা কখনো একটি মুসলিম সমাজের রীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে পারে না।
সুপ্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! শরীয়ত প্রবর্তিত হিজাব সেটি, যাতে আটটি শর্ত পাওয়া যায় :
প্রথম শর্ত : নারীর সমগ্র শরীরই জিলবাব বা বোরকা দিয়ে ঢাকা থাকতে হবে।
يُدْنِينَ عَلَيْهِنَّ مِنْ جَلابِيبِهِنَّ
এই আয়াতাংশ সেদিকেই ইঙ্গিত করছে। জিলবাব হলো সমগ্র শরীর ঢেকে রাখে এমন পোশাক।
দ্বিতীয় শর্ত : পর্দার উদ্দেশ্যে-পরা পোশাকটাই খোদ সৌন্দর্য না হতে হবে। অর্থাৎ এমন রঙ চড়ানো বা কারুকার্যখচিত না হতে হবে যা পুরুষের লোলুপ দৃষ্টি আকৃষ্ট করে। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
{وَلَا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا مَا ظَهَرَ مِنْهَا}
‘আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না’ (সূরা আন-নূর : ৩১)।
‘যা সাধারণত প্রকাশ পায়’ এর দ্বারা যা অনিচ্ছা সত্ত্বেও প্রকাশ পায়। সে হিসেবে যদি বোরকা নিজেই সৌন্দর্যবহ হয়, তবে তা পরিধান করা শুদ্ধ হবে না এবং এটাকে হিজাবও বলা হবে না। কেননা হিজাব তো সেটিই যা পরপুরুষ থেকে নারীর সৌন্দর্যকে আড়াল করে রাখে।
তৃতীয় শর্ত : হিজাব এমন মোটা কাপড়ের হতে হবে যা ভেদ করে ভেতরের সৌন্দর্য প্রস্ফূটিত হবে না। আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
(صِنْفَانِ مِنْ أَهْلِ النَّارِ، لَمْ أَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَأَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُونَ بِهَا النَّاسَ، وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيلَاتٌ مَائِلَاتٌ، رُءُوسُهُنَّ كَأَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ، لَا يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلَا يَجِدْنَ رِيحَهَا، وَإِنَّ رِيحَهَا لَيُوجَدُ مِنْ مَسِيرَةِ كَذَا وَكَذَا)
‘দুই প্রকারের জাহান্নামী আমি এখনো দেখিনি। একপ্রকার হলো, ওই সম্প্রদায় যাদের হাতে গরুর লেজ সদৃশ চাবুক থাকবে। তারা এসব চাবুক দ্বারা (অন্যায়ভাবে) লোকদেরকে প্রহার করতে থাকবে। আর আরেক প্রকার সেসব নারী যারা কাপড় পরিধান করার পরেও উলঙ্গ থাকবে। তারা (পুরুষদেরকে নিজেদের দিকে আকৃষ্ট করবে এবং নিজেরাও (পুরুষদের দিকে) আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথা হবে সম্মুখে ঝুঁকে পড়া উটের কুঁজের ন্যায়। তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না এমনকি তারা জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। অথচ জান্নাতের ঘ্রাণ অনেক অনেক দূর থেকেও পাওয়া যাবে’ (মুসলিম)।
ইবনে আবদুল বার রহ. বলেন, এ হাদীসে সেসব মহিলার কথা বলা হয়েছে যারা এমন পাতলা ও সূক্ষ্ম পোশাক পরিধান করে যা তাদের দৈহিক সৌন্দর্য ঢাকতে সক্ষম নয়। ফলে দৃশ্যত তাদেরকে কাপড় পরিধান করেছে বলে মনে হলেও বাস্তবে তারা উলঙ্গই থাকে।
চতুর্থ শর্ত : নারীর হিজাব ঢিলেঢালা ও প্রশস্ত হতে হবে। এমন সঙ্কীর্ণ হলে চলবে না, যা নারীর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে ফুটিয়ে তোলে। কেননা হিজাব পরিধান করার উদ্দেশ্য ফেতনার আশঙ্কা দূর করা। আর এটা অর্জন হয় না যদি ঢিলেঢালা পোশাক পরিধান করা না হয়। সঙ্কীর্ণ পোশাক, তা যদিও শরীরের চামড়ার রঙ ঢেকে রাখে, তবে তা শরীরের ভাঁজগুলো প্রকাশ করে দেয়। উসামা ইবনে যায়েদ রাযি. বলেন, আবু উসামা রাযি. বলেছেন : ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে একটি ঘন পাতলা কাতান পোশাক পরালেন, যা দাহিয়াতুল কালবী রাযি. তাঁকে উপহার হিসেবে দিয়েছিলেন। অতঃপর আমি তা আমার স্ত্রীকে পরিয়ে দিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : ‘কী হলো, তুমি যে কাতান পরিধান করলে না? আমি বললাম : হে আল্লাহর রাসূল! আমি তা আমার স্ত্রীকে পরিয়ে দিয়েছি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে বললেন :
(مُرْهَا فَلْتَجْعَلْ تَحْتَهَا غِلَالَةً، إِنِّي أَخَافُ أَنْ تَصِفَ حَجْمَ عِظَامِهَا)
‘ তাকে তুমি এর নিচে একটি আন্তর পোশাক (সেমিস) পরিধান করতে বলবে। কেননা আমি আশঙ্কা করছি যে তার হাড়ের আকৃতি প্রকাশিত হয়ে যাবে’ (মুসনাদে আহমদ। আলবানী রহ. জিলবাবুল মারআতিল মুসলিমা কিতাবে হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)।
পঞ্চম শর্ত : হিজাবের ওপর আতর বা সেন্ট ব্যবহার করা যাবে না। এ মর্মে বহু বিশুদ্ধ হাদীস রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ :
(أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ)
‘যে নারী সুগন্ধি ব্যবহার করে লোকদের পাশ দিয়ে গেল এ উদ্দেশ্যে যে তারা তার সুগন্ধি পাক, তবে সে যিনাকারী-ব্যভিচারী’ (আলবানী:সহীহ আততারগীব)।
আবু হুরায়রা রাযি. বলেন, ‘এক নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে তার কাছ দিয়ে অতিক্রম করল। তিনি বললেন : ‘হে আল্লাহর বান্দী! তুমি কি মসজিদের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছ? সে বলল, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘এর জন্যই কি সুগন্ধি মাখিয়েছ? সে বলল, ‘হ্যাঁ’। তিনি বললেন, ‘তাহলে তুমি ফিরে যাও এবং গোসল করে নাও। কেননা আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি :
مَا مِنِ امْرَأَةٍ تَخْرُجُ إِلَى الْمَسْجِدِ تَعْصِفُ رِيحُهَا فَيَقْبَلَ اللَّهُ مِنْهَا صَلاتَهَا حَتَّى تَرْجِعَ إِلَى بَيْتِهَا فَتَغْتَسِل
‘ যদি কোনো নারী সুগন্ধি ছড়িয়ে ছড়িয়ে মসজিদের দিকে বের হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাআলা তার নামায কবুল করবেন না, যদি না সে বাড়ি ফিরে এসে গোসল করে নেয়’ (আলবানী : সহীহু ইবনে খুযাইমাহ)
ষষ্টম শর্ত : নারীর পোশাক পুরুষের পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। আবু হুরাইয়া রাযি. বলেন :
(لَعَنَ رُسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلِيْهِ وَسَلَّمْ الرَّجُلَ يَلْبَسُ لِبْسَةَ الْمَرْأَةِ، وَالْمَرْأَةَ تَلْبَسُ لِبْسَةَ الرَّجُلِ)
‘ রাসূলুল্লাহ সাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম ওই পুরুষের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন, যে নারীর পোশাক পরে। আর ওই নারীর প্রতি অভিসম্পাত করেছেন যে পুরুষের পোশাক পরিধান করে’ ( আহমদ ও আবূ দাউদ)।
অতঃপর পুরুষ যে ধরনের চাদর, লুঙ্গি, অথাব জামা-কাপড় পরিধান করে নারীও সে ধরনের জামা-কাপড় পরিধান করবে তা ইসলামে অনুমোদিত নয়। কেননা এরূপ করলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অভিসম্পাতের আওতাভুক্ত হতে হবে।
সপ্তম শর্ত : মুসলিম নারীর পোশাক কাফির নারীর পোশাকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হবে না। কেননা শরীয়তের বিধান অনুযায়ী মুসলমান নারী ও পুরুষের জন্য কাফিরদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা বৈধ নয়। হোক তা তাদের ইবাদত-বন্দেগীর ক্ষেত্রে অথবা ঈদ-পর্ব, পোশাক-আশাক ইত্যাদির ক্ষেত্রে। হাদীসে এসেছে :
(مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ)
‘যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাথে সাদৃশ্য অবলম্বন করল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত হলো’ (আবূ দাউদ)।
তাই পাশ্চাত্যের শোরুমগুলোতে কাফিরদের পরিধেয় যেসব পোশাক প্রদর্শিত হয় তা মুসলিম নারীদের জন্য ব্যবহার করা কখনো উচিত নয়।
অষ্টম শর্ত : খ্যাতি ও সুনামের পোশাক না হতে হবে। অর্থাৎ এমন পোশাক যা অন্যদের কাছে অপরিচিত এবং যার দ্বারা মানুষের মাঝে প্রসিদ্ধি অর্জনই মূখ্য হয়ে থাকে। ইবনে উমর রাযি. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
(مَنْ لَبِسَ ثَوْبَ شُهْرَةٍ فِي الدُّنْيَا، أَلْبَسَهُ اللَّهُ ثَوْبَ مَذَلَّةٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، ثُمَّ أَلْهَبَ فِيهِ نَارًا)
‘ যে ব্যক্তি দুনিয়াতে প্রসিদ্ধির পোশাক পরবে, আল্লাহ তাআলা তাকে কিয়ামতের দিন লাঞ্ছনার পোশাক পরাবেন, অতঃপর তাতে আগুন ধরিয়ে দিবেন’ (আহমদ ও আবূ দাউদ)।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমাদের স্ত্রী কন্যাদেরকে উল্লিখিত শর্ত অনুযায়ী পোশাক পরতে অভ্যস্ত করা দরকার। বরং তাদেরকে এ মর্মে বাধ্য করা জরুরী। হাদীসে এসেছে :
(كُلُّكُمْ رَاعٍ وَكُلُّكُمْ مَسْؤولٌ عَنْ رَعِيَّتِه)
‘তোমাদের প্রত্যেকেই তত্ত্বাবধায়ক আর তোমাদের প্রত্যেককে তার অধিনস্তদের সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে’ (বুখারী)।
এ ছাড়া পবিত্র কুরআনে নিজকে ও নিজ পরিবারবর্গকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানোর স্পষ্ট নির্দেশ এসেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন :
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا قُوا أَنْفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ}
‘ হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর’ (সূরা আত-তাহরীম : ৬)।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! দৃষ্টিকে স্বাধীন করে দিতে তা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই ফিতনা বয়ে আনে। দৃষ্টিকে সংযত করলে তা উভয়কে নিরাপদ রাখে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন :
{قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ. وَقُلْ لِلْمُؤْمِنَاتِ يَغْضُضْنَ مِنْ أَبْصَارِهِنَّ وَيَحْفَظْنَ فُرُوجَهُنَّ وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَلْيَضْرِبْنَ بِخُمُرِهِنَّ عَلَى جُيُوبِهِنَّ وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلاَّ لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ أَبْنَائِهِنَّ أَوْ أَبْنَاءِ بُعُولَتِهِنَّ أَوْ إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي إِخْوَانِهِنَّ أَوْ بَنِي أَخَوَاتِهِنَّ أَوْ نِسَائِهِنَّ أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُنَّ أَوِ التَّابِعِينَ غَيْرِ أُولِي الإرْبَةِ مِنَ الرِّجَالِ أَوِ الطِّفْلِ الَّذِينَ لَمْ يَظْهَرُوا عَلَى عَوْرَاتِ النِّسَاءِ وَلا يَضْرِبْنَ بِأَرْجُلِهِنَّ لِيُعْلَمَ مَا يُخْفِينَ مِنْ زِينَتِهِنَّ وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ}
‘ মুমিন পুরুষদের বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র। নিশ্চয় তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবহিত। আর মুমিন নারীদেরকে বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। আর যা সাধারণত প্রকাশ পায় তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য তারা প্রকাশ করবে না। তারা যেন তাদের ওড়না দিয়ে বক্ষদেশকে আবৃত করে রাখে। আর তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, নিজদের ছেলে, স্বামীর ছেলে, ভাই, ভাই এর ছেলে, বোনের ছেলে, আপন নারীগণ, তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে, অধীনস্থ যৌনকামনামুক্ত পুরুষ অথবা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ বালক ছাড়া কারো কাছে নিজদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। আর তারা যেন নিজদের গোপন সৌন্দর্য প্রকাশ করার জন্য সজোরে পদচারণা না করে। হে মুমিনগণ, তোমরা সকলেই আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার’ (সূরা আন-নূর : ৩০-৩১)।
আল্লাহ তাআলা এ দুই আয়াতে মুমিনদেরকে তাদের দৃষ্টি সংযত রাখতে এবং তাদের লজ্জাস্থান হিফাযত করতে নির্দেশ দিয়েছেন। যিনা-ব্যাভিচারের মতো জঘন্য অপকর্ম এবং তা থেকে সৃষ্ট নানামুখী ফিতনা থেকে মুসলমানদের রক্ষা করার জন্যই আল্লাহ তাআলা এ নির্দেশ দিয়েছেন। কেননা দৃষ্টিকে স্বাধীনতা দেয়া হলে আত্মার ব্যাধি সৃষ্টি ও অপকর্ম সংঘটিত হয়। আর দৃষ্টি সংযত রাখলে তা নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দেয়। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন :
{قُلْ لِلْمُؤْمِنِينَ يَغُضُّوا مِنْ أَبْصَارِهِمْ وَيَحْفَظُوا فُرُوجَهُمْ ذَلِكَ أَزْكَى لَهُمْ إِنَّ اللَّهَ خَبِيرٌ بِمَا يَصْنَعُونَ}
‘ মুমিন পুরুষদের বল, তারা তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখবে এবং তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করবে। এটাই তাদের জন্য অধিক পবিত্র’ (সূরা আন-নূর : ৩)।
অতঃপর দৃষ্টি সংযত রাখা ও লজ্জাস্থান হিফাযত করা দুনিয়া ও আখেরাতে মুমিনদের নিরাপত্তা ও পবিত্রতা নিশ্চিত করে। আর দৃষ্টির লাগাম ছেড়ে দেয়া, লজ্জাস্থানের লাগাম ছেড়ে দেয়া দুনিয়া ও আখেরাতে ধ্বংস ডেকে আনে। আল্লাহ তাআলা এও জানিয়ে দিয়েছেন যে তিনি মানুষের কর্ম সম্পর্কে সম্যক অবহিত। কোনো কিছুই আল্লাহর কাছে গোপন নয়, থাকতে পারে না। ইরশাদ হয়েছে :
{يَعْلَمُ خَائِنَةَ الْأَعْيُنِ وَمَا تُخْفِي الصُّدُورُ}
‘ চক্ষুসমূহের খিয়ানত এবং অন্তরসমূহ যা গোপন রাখে তিনি তা জানেন’ (সূরা গাফের : ১৯)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :
{وَمَا تَكُونُ فِي شَأْنٍ وَمَا تَتْلُو مِنْهُ مِنْ قُرْآنٍ وَلا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلاَّ كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُوداً إِذْ تُفِيضُونَ فِيه}
‘ আর তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন আর যা কিছু তিলাওয়াত কর না কেন আল্লাহর পক্ষ হতে কুরআন থেকে এবং তোমরা যে আমলই কর না কেন, আমি তোমাদের ওপর সাক্ষী থাকি, যখন তোমরা তাতে নিমগ্ন হও। তোমার রব থেকে গোপন থাকে না যমীনের বা আসমানের অণু পরিমাণ কিছুই এবং তা থেকে ছোট বা বড়, তবে (এর সব কিছুই) রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে’ (সূরা ইউনুস : ৬১)।
তাই আসুন আমরা আল্লাহকে ভয় করি। অপকর্মে লিপ্ত হলে আল্লাহ তাআলা দেখবেন, সীমালঙ্ঘন করলে আল্লাহ তাআলা দেখবেন এই অনুভূতি সবার হৃদয়ে সদা জাগ্রত রাখি। সর্বোচ্চ পর্যায়ে সতর্ক থেকে আল্লাহ তাআলার আদেশ-নিষেধ পরিপূর্ণভাবে মান্য করে চলি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফীক দান করুন।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .
اَلْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِيْنَ، اللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى عَبْدِكَ وَنَبِيِّكَ مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ ، أَمَّا بَعْدُ :
সুপ্রিয় ভাইয়েরা! আজ মুসলিম নারীরা পর্দাহীনতা ও সৌন্দর্য প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় যে পর্যায়ে পৌঁছেছে তা আর কারো কাছেই গোপন নয়। এ কারণেই অশ্লীলতা ও অপকর্মের দিকে ধাবিত করে, অশ্লীলতা ও অপকর্মের প্রতি হাতছানি দিয়ে ডাকে এমন সব উপায়-উপকরণ ইসলামী শরীয়তে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অশ্লীলতার সব উৎসমুখ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। আর এ জাতীয় এক গর্হিত কাজ হলো পরপুরুষের সাথে কোনো নারীর একাকী হওয়া কিংবা মাহরাম ছাড়া পুরুষের সাথে সফর করা। হাদীসে এসেছে :
(لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ، إِلَّا وَمَعَهَا ذُو مَحْرَمٍ، وَلَا تُسَافِرِ الْمَرْأَةُ، إِلَّا مَعَ ذِي مَحْرَمٍ)
‘কোনো পুরুষ কোনো নারীর সাথে তার মাহরাম ছাড়া একা হবে না এবং কোনো নারী মাহরাম ছাড়া সফরও করবে না’ (মুসলিম)।
হাদীসে আরো এসেছে :
(أَلَا لَا يَخْلُوَنَّ رَجُلٌ بِامْرَأَةٍ إِلَّا كَانَ ثَالِثَهُمَا الشَّيْطَانُ)
‘সাবধান! কোনো পুরুষ যেন কখনো কোনো নারীর সাথে একা না হয়, অন্যথায় শয়তান তাদের তৃতীয়জন হিসেবে থাকবে’ (আহমদ)।
হাদীসে আরো এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন :
(أَلَا لَا يَبِيتَنَّ رَجُلٌ عِنْدَ امْرَأَةٍ ثَيِّبٍ إِلَّا أَنْ يَكُونَ نَاكِحًا أَوْ ذَا مَحْرَم)
‘ সাবধান! কোনো পুরুষ কোনো অকুমারী নারীর কাছে কখনোই রাতযাপন করবে যদি না সে তার স্বামী অথবা মাহরাম হয়’ (মুসলিম)।
প্রিয় ভাইয়েরা! আপনারা আল্লাহকে ভয় করুন এবং স্ত্রী-কন্যাদের নিয়ন্ত্রণ করুন। স্ত্রী-কন্যাদের পর্দাহীনতা, সৌন্দর্য প্রদর্শন করে বেড়ানো এবং কাফিরদের সাদৃশ্য অবলম্বন ইত্যাদি থেকে নিবৃত করুন। আর জেনে রাখবেন, শরীয়তের সীমা লঙ্ঘিত হচ্ছে দেখেও যদি আপনি তাদের ব্যাপারে চুপ থাকেন তবে আপনি কিন্তু তাদের গুনাহে শরীক হয়ে যাবেন। আল্লাহর অসন্তুষ্টি সাধারণ আযাবের উপযোগী হয়ে যাবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিফাযত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
(مَا تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَى الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ)
‘আমি আমার পরে পুরুষের জন্য নারীর চেয়ে অধিক ক্ষতিকর কোনো ফেতনা রেখে যাইনি’ (বুখারী)।
রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেছেন :
(كَمْ مِنْ كَاسِيَةٍ فِي الدُّنْيَا عَارِيَةٍ يَوْمَ الْقِيَامَةِ)
‘দুনিয়ার অনেক পোশাক পরিহিতাই পরকালে থাকবে বিবস্ত্র’ (বুখারী)।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! সৌন্দর্যপ্রকাশক পাতলা কাপড় পরা, আঁটসাঁট কাপড় পরা, সংক্ষিপ্ত কাপড় পরা এবং মানুষকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করার বিরুদ্ধে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কঠিন সতর্কবাণী ইতোপূর্বে শুনেছি। অর্থাৎ নারীদের যারা এ জাতীয় ঘৃণিত কাজ করে বেড়াবে, তারা জাহান্নামের অধিবাসী হবে, তারা জান্নাত থেকে বঞ্চিত হবে। শাশ্বত সুখ থেকে বঞ্চিত হবে। এমনকি তারা জান্নাতের গন্ধ পর্যন্ত পাবে না। আল্লাহ আমাদেরকে হিফাযত করুন।
এ বিষয়ক আরেকটি বড় ফাসাদ হলো মুসলিম নারীদের কাফির নারীদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা। সংক্ষিপ্ত পোশাক পরা। বক্ষ অনাচ্ছাদিত রাখা। সাজগোজ করে সৌন্দর্যের প্রদর্শনী করে বেড়ানো। কাফির নারীদের মতো চুল বাঁধা। এমনকি কৃত্রিম চুল ব্যবহার করে নিজকে আরো সুন্দরী করে পুরপুরুষের সামনে উপস্থাপন করা। যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন সে তাদের দলভুক্ত হবে, হাদীসটি ইতোপূর্বে উল্লিখিত হয়েছে।
প্রিয় মুসল্লী ভাইয়েরা! আমাদের দেশে ও বিশ্বের অন্যান্য জায়গায় নারী সম্প্রদায় নানাভাবে যে লাঞ্ছনা-গঞ্জনা ও যৌন হয়রানীর শিকার হচ্ছে, নারীর পর্দাহীনতাই এর পেছনে বড় কারণ হিসেবে কাজ করছে। আসুন আমরা আল্লাহর কাছে দু‘আ করি তিনি যেন আমাদের মা-বোন, স্ত্রী-কন্যাদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন। তাদেরকে পর্দা করার তাওফীক দান করেন।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের মা-বোনদেরকে হিফাযত করুন। আপনি আমাদের মা-বোন স্ত্রী-কন্যাদেরকে পর্দা করার তাওফীক দান করুন। পর্দাহীনতা, বেহায়াপনা থেকে আমাদের সমাজ, দেশ ও জাতিকে রক্ষা করুন। পাশ্চাত্যের অনুকরণ থেকে আমাদের মা-বোনদের হিফাযত করুন।
হে আল্লাহ! আমরা যারা পুরুষ রয়েছি, স্ত্রী-কন্যাসহ পরিবারের সকল নারী সদস্যকে পর্দায় রাখার তাওফীক দান করুন।
ইয়া রাব্বাল আলামীন! আপনি আমাদের সকল পাপ-গুনাহ ক্ষমা করে দিন। আপনি আমাদের দুনিয়া আখিরাতের সকল কল্যাণ দান করুন। জাহান্নাম থেকে আমাদের রক্ষা করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।
عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله ِ: ( إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.