الْحَمْدُ لِلَّه الَّذِي عَمَّرَ بِتَقْوَاهُ قُلُوْبَ الْمُتَّقِيْنَ وَجَعَلَ تَقْوَاه سَبِيِلَ الْنَّجَاةِ لِلْأوَّلِيْنَ وَالْآخِرِيْنَ فَمَنْ رَامَ الْفَوْزَ وَالْفَلَاحَ وَرَغِبَ فِي السَّلامَةِ وَالنَّجَاحِ فَعَلَيْهِ لُزُوْمَ نَهْجِ الْمُتَّقِيْنَ وَسُلُوْكَ سَبِيِلِ الْمُحْسِنِيْنَ، أَحْمَدُهُ تَعَالَى وَأَشْكُرُهُ وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلهَ إِلَا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيْكَ لَهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ بَعَثَهُ بِالْهُدَى وَدِيْنِ الْحَقِّ. . أَمَّا بَعْدُ: عِبَادَ اللهِ اتَّقُوْا اللهَ وَأَطِيْعُوْه فَالتَّقْوَى وَصِيَّةُ اللهِ لِلْأَوَّلِيْنَ وَالْآخِرِيْنَ
كَمَا قَالَ تَعَالَى: {وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُوا اللَّهَ} (سورة النساء:131 )
প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! শুরুতে আমি নিজকে ও আপনাদেরকে আল্লাহ তাআলার তাকওয়া অবলম্বনের উপদেশ দিচ্ছি। তাকওয়া সকল কল্যাণের আধার, আল-কুরআনে সর্বাধিক উল্লিখিত এক মহৎ গুণ। প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, কাছের অথবা দূরের সকল কল্যাণের মূল হলো তাকওয়া। অনুরূপভাবে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য, কাছের অথবা দূরের সকল অন্যায় ও পাপাচারের বিরুদ্ধে তাকওয়া হলো অতন্দ্র প্রহরী, প্রতোরোধক দুর্গ।
তাকওয়া শব্দের আভিধানিক অর্থ, সাবধানতা অবলম্বন করা। শরীআতের পরিভাষায় আল্লাহর শাস্তি ও অসন্তুষ্টির কার্যকারণসমূহ থেকে নিজকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সাবধানতা অবলম্বন করা। সহজভাবে বলতে গেলে সর্বক্ষেত্রে আল্লাহর ভয় হৃদয়ে পোষণ করা।
প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! তাকওয়া এমন এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়-আল্লাহ তাআলা যার নির্দেশ-উপদেশ পূর্বের ও পরের সকল জাতিকেই দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে :
{وَلَقَدْ وَصَّيْنَا الَّذِينَ أُوتُواْ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكُمْ وَإِيَّاكُمْ أَنِ اتَّقُواْ اللَّهَ}
আর তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছে তাদেরকে এবং তোমাদেরকে আমি নির্দেশ দিয়েছি যে, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর (সূরা আন-নিসা:১৩১)।
তাকওয়া হলো নবীদের দাওয়াতের বিষয়। আল্লাহর ওলীদের শিআর বা নির্দশন। প্রত্যেক নবীই তার কাওমকে বলেছেন :
{أَلاَ تَتَّقُونَ}
তোমরা কি তাকওয়া অবলম্বন করবে না? (সূরা আশ-শুআরা:১০৬)
আর আল্লাহর ওলী তো তারাই যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেছে ও তাকওয়া অবলম্বন করেছে।
তাকওয়া আসলে বান্দা ও পাপাচারের মাঝে প্রতিরক্ষা-প্রাচীর দাঁড় করিয়ে দেয়। অর্থাৎ বান্দাকে সার্বক্ষণিকভাবে পাপাচার থেকে রক্ষা করতে পারে। আর আল্লাহ তাআলাই হলেন আহলুত্তাকওয়া তথা বান্দার তাকওয়া পাওয়ার একমাত্র অধিকারি। একমাত্র আল্লাহ তাআলাই বান্দার সর্বোচ্চ তাযীম, ভক্তি, ভয় ও সম্মান পাওয়ার অধিকারি। তাকওয়া কাকে বলে, আলী রাযি. এর নিম্নবর্ণিত কথা থেকে তা সুস্পষ্ট
الْخُوْفُ مِنَ الْجَلِيْلِ، وَالْعَمَلُ بِالتَّنْزِيْلِ، وَالْقَنَاعَةُ بِالْقَلْيِلِ، وَالاسْتِعْدَادُ لِيَوْمِ الرَّحِيْلِ
মহামহিমকে ভয় করা, কুরআন অনুযায়ী আমল করা, অল্পে তুষ্ট থাকা এবং মৃত্যুদিনের জন্য প্রস্তুতি নেয়া।
মুত্তাকীদের গুণাবলী
সুপ্রিয় হাযেরীন! তাকওয়া শুধু অন্তরে সীমিত থাকার বিষয় নয়। বরং সত্যিকার তাকওয়াধারীর অন্তর ছাপিয়ে তাকওয়া তার সৌরভ ছড়ায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে, কর্মে ও আমলে। মুত্তাকির গুণাবলীর মধ্যে কয়েকটি হলো ঈমান বিল গায়েব বা অদৃশ্যের প্রতি ঈমান। যথার্থরূপে নামাজ আদায়। আল্লাহর পথে অর্থসম্পদ ব্যয়। আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তার প্রতি বিশ্বাস, আখিরাতের প্রতি ইয়াকীন। মুত্তাকীদের এ গুণগুলো নিচের আয়াতে অত্যন্ত উজ্জ্বলভাবে ফুটে উঠেছে :
{الم. ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ. الَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِالْغَيْبِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ. وَالَّذِينَ يُؤْمِنُونَ بِمَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنْزِلَ مِنْ قَبْلِكَ وَبِالْآَخِرَةِ هُمْ يُوقِنُونَ. أُولَئِكَ عَلَى هُدًى مِنْ رَبِّهِمْ وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.}
আলিফ-লাম-মীম। এটি (আল্লাহর) কিতাব, এতে কোন সন্দেহ নেই, মুত্তাকীদের জন্য হিদায়েত। যারা গায়েবের প্রতি ঈমান আনে, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি তা থেকে ব্যয় করে। এবং যারা ঈমান আনে, যা তোমার প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যা তোমার পূর্বে নাযিল করা হয়েছে তৎপ্রতি। আর আখিরাতের প্রতি তারা ইয়াকীন রাখে। তারা তাদের রবের পক্ষ থেকে হিদায়াতের উপর রয়েছে এবং তারাই সফলকাম (সূরা আল বাকারা: ১-৫)।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! ঈমান হলো তাকওয়ার প্রথম ধাপ। অর্থাৎ এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করা, সকল ইবাদত-বন্দেগী, দুআ-প্রার্থনা, নযর-মান্নত তারই জন্য নিবেদন করা। একমাত্র আল্লাহ তাআলাকেই সকল কিছুর সৃষ্টিকর্তা, লালনপালকারী ও বিধানদাতা হিসেবে মানা। যাদের ঈমান নেই তারা মুত্তাকীদের দলভুক্ত হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। কেননা তাকওয়া হলো আল্লাহকে ভয় করার নাম। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে চেনে না, আল্লাহকে বিশ্বাস করে না তার আল্লাহকে ভয় করার কোনো প্রশ্নই ওঠে না।
আল্লাহর প্রতি যথার্থরূপে বিশ্বাসের পর তিনি যেসব বিষয়ে বিশ্বাস করতে বলেছেন সেসব বিষয়ে ঈমান আনা তাকওয়ার একটি অলঙ্ঘনীয় শর্ত। কেননা এর অন্যথা হলে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসের দাবি নিরর্থক বলে বিবেচিত হবে। আল্লাহর প্রতি সত্যিকার ঈমান মুমিনকে তাকওয়ার লেবাস পরিয়ে দেয়। মুমিনকে মুহসিন তথা সৎকর্মশীল করে দেয়। আর মুমিন যখন তাকওয়ার লেবাস পরে নেয় তখন আল্লাহর সকল আদেশ পালন করা ও নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ থেকে বিরত থাকা তার জীবনের উদ্দেশ্যে পরিণত হয়। তাই মুত্তাকী ব্যক্তি আল্লাহ তাআলা যেসব নেক আমল করতে বলেছেন কায়মনোবাক্যে সেসব আমল যথার্থরূপে আদায় করে যায়।
অঙ্গীকার পূরণ করা ও কষ্ট দুর্দশায় ধৈর্যধারণ করাও মুত্তাকীদের গুণাবলীর মধ্যে শামিল। ইরশাদ হয়েছে :
{وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آَمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ. }
ভালো কাজ এটা নয় যে, তোমরা তোমাদের চেহারা পূর্ব ও পশ্চিম দিকে ফিরাবে বরং ভালো কাজ হল যে ঈমান আনে আল্লাহ, শেষ দিবস, ফেরেশতাগণ, কিতাব ও নবীগণের প্রতি এবং যে সম্পদ প্রদান করে তার প্রতি আসক্তি সত্ত্বেও নিকটাত্মীয়গণকে, ইয়াতীম, অসহায়, মুসাফির ও প্রার্থনাকারীকে এবং বন্দিমুক্তিতে। আর সালাত কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং যারা অঙ্গীকার করে তা পূর্ণ করে, যারা ধৈর্যধারণ করে কষ্ট ও দুর্দশায় ও যুদ্ধের সময়ে। তারাই সত্যবাদী এবং তারাই মুত্তাকী (সূরা আল বাকারা: ১৭৭)।
মুত্তাকীদের গুণাবলীর মধ্যে একটি হলো, কৃত পাপ ও গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। ইস্তিগফার করা। ইরশাদ হয়েছে :
{وَسَارِعُوا إِلَى مَغْفِرَةٍ مِنْ رَبِّكُمْ وَجَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالْأَرْضُ أُعِدَّتْ لِلْمُتَّقِينَ . الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ. وَالَّذِينَ إِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً أَوْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ ذَكَرُوا اللَّهَ فَاسْتَغْفَرُوا لِذُنُوبِهِمْ وَمَنْ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا اللَّهُ وَلَمْ يُصِرُّوا عَلَى مَا فَعَلُوا وَهُمْ يَعْلَمُونَ.}
আর তোমরা দ্রুত অগ্রসর হও তোমাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও জান্নাতের দিকে, যার পরিধি আসমানসমূহ ও যমীনের সমান, যা মুত্তাকীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। যারা সুসময়ে ও দুঃসময়ে ব্যয় করে এবং ক্রোধ সংবরণ করে ও মানুষকে ক্ষমা করে। আর আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালবাসেন। আর যারা কোন অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজদের প্রতি যুলম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর তাদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তা তারা বার বার করে না (সূরা আলে ইমরান:১৩৩-১৩৫)।
তাকওয়ার ফযীলত
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! তাকওয়া অবলম্বনের বহু ফযীলত রয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো তাকওয়া দ্বারা অন্তর খুলে যায়। ইলম হাসিল হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন :
{وَاتَّقُوا اللَّهَ وَيُعَلِّمُكُمُ اللَّهُ}
আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং আল্লাহ তোমাদেরকে শেখাবেন (সূরা আল বাকারা:২৮২)।
তাই আমরা যদি আল্লাহর পথে চলার ইলমে নিজেদেরকে সমৃদ্ধ করতে চাই, দীনী ইলমের বিশাল ভাণ্ডার নিজেদের জন্য উন্মুক্ত করতে চাই, তবে তাকওয়া অবলম্বনই হবে আমাদের বড় মাধ্যম। তাকওয়া অবলম্বনের আরেকটি ফযীলত হলো, যে ব্যক্তি তাকওয়া অবলম্বন করে আল্লাহ তাকে সত্য-মিথ্যা যাচাইয়ের মানদণ্ড দান করেন। পাপ-পূণ্যের মাঝে পার্থক্য করার যোগ্যতা দান করেন। পাশাপাশি তিনি তার গুনাহসমূহও ক্ষমা করে দেন। ইরশাদ হয়েছে :
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا إِنْ تَتَّقُوا اللَّهَ يَجْعَلْ لَكُمْ فُرْقَانًا وَيُكَفِّرْ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ ذُو الْفَضْلِ الْعَظِيمِ}
হে মুমিনগণ, যদি তোমরা আল্লাহকে ভয় কর তাহলে তিনি তোমাদের জন্য ফুরকান প্রদান করবেন, তোমাদের থেকে তোমাদের পাপসমূহ দূর করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ মহা অনুগ্রহশীল (সূরা আল-আনফাল:২৯)।
অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা বান্দার মধ্যে আন্তরিক দৃঢ়তা, বিচক্ষণতা ও সুন্দর হিদায়েত সৃষ্টি করে দেবেন, যার মাধ্যমে সে হক ও বাতিলের পার্থক্য করতে পারবে।
আর তাকওয়া যেহেতু মানুষের ঈমানকে দৃঢ় করে দেয়, নেক আমল করতে এবং পাপ ও অন্যায় থেকে তাওবা করতে উদ্বুদ্ধ করে, সৎ কাজের পথে চালিত করে, তাই সে ব্যক্তির গুনাহসমূহও পূন্যে রূপান্তরিত হয়ে যায়। ইরশাদ হয়েছে :
{إِلَّا مَنْ تَابَ وَآَمَنَ وَعَمِلَ عَمَلًا صَالِحًا فَأُولَئِكَ يُبَدِّلُ اللَّهُ سَيِّئَاتِهِمْ حَسَنَاتٍ وَكَانَ اللَّهُ غَفُورًا رَحِيمًا. }
তবে যে তাওবা করে, ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পূণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সুরা আল-ফুরকান:৭০)।
তাকওয়া অবলম্বনের আরেকটি ফযীলত হলো আমল কবুল হওয়া। কেননা যে ব্যক্তির তাকওয়া নেই সে হয়তো মোটেই আমল করবে না, আর যদি করে তাহলে তা তাকওয়াশূন্য হওয়ার কারণে ইখলাসবিবর্জিত হতে বাধ্য। তাই আল্লাহ তাআলা সে আমল কবুল করবেন না- এটাই স্বাভাবিক। ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّمَا يَتَقَبَّلُ اللَّهُ مِنَ الْمُتَّقِينَ}
আল্লাহ তো কেবল মুত্তাকীদের থেকেই কবুল করেন (সূরা আল মায়েদা: ২৭)।
তাকওয়া অবলম্বনের আরেকটি বিশেষ ফযীলত হলো তাকওয়ার কারণে আল্লাহর নিকট উক্ত ব্যক্তির মর্যাদা বেড়ে যাওয়া। ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ}
নিশ্চয় তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট অধিক সম্মানিত সে যে তোমাদের মধ্যে অধিক পরহেযগার (সূরা আল হুজুরাত:১৩)।
তাকওয়া অবলম্বনকারী ব্যক্তিদেরকে আল্লাহ তাআলা কর্তৃক দ্বিগুণ পুরস্কার দেয়া এবং তার পথচলার জন্য আলোর ব্যবস্থা করাও তাকওয়ার একটি অন্যতম ফল। আল্লাহ তাআলা বলেন :
{يا أَيُّهَا الَّذِينَ ءامَنُواْ اتَّقُواْ اللَّهَ وَءامِنُواْ بِرَسُولِهِ يُؤْتِكُمْ كِفْلَيْنِ مِن رَّحْمَتِهِ وَيَجْعَل لَّكُمْ نُوراً تَمْشُونَ بِهِ وَيَغْفِرْ لَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ.}
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান আন, তিনি স্বীয় রহমতে তোমাদেরকে দ্বিগুণ পুরস্কার দেবেন, আর তোমাদেরকে নূর দেবেন যার সাহায্যে তোমরা চলতে পারবে এবং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবেন। আর আল্লাহ বড়ই ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু (সূরা আল হাদীদ:২৮)।
তাকওয়া অবলম্বনের আরেকটি ফযীলত হলো, তাকওয়া অবলম্বনকারী ব্যক্তির পরকালে নাজাত পেয়ে ধন্য হওয়া। ইরশাদ হয়েছে :
{وَإِن مّنكُمْ إِلاَّ وَارِدُهَا كَانَ عَلَى رَبِّكَ حَتْماً مَّقْضِيّاً ثُمَّ نُنَجّى الَّذِينَ اتَّقَواْ وَّنَذَرُ الظَّالِمِينَ فِيهَا جِثِيّاً}
আর তোমাদের প্রত্যেককেই তা অতিক্রম করতে হবে, এটি তোমার রবের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তারপর আমি তাদেরকে মুক্তি দেব যারা তাকওয়া অবলম্বন করেছে। আর যালিমদেরকে আমি সেখানে রেখে দেব নতজানু অবস্থায় (সূরা মারয়াম:৭১-৭২)।
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে :
{وَيُنَجّى اللَّهُ الَّذِينَ اتَّقَوْاْ بِمَفَازَتِهِمْ لاَ يَمَسُّهُمُ السُّوء وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ }
আর আলহ মুত্তাকীদেরকে তাদের সাফল্যসহ নাজাত দেবেন। কোন অমঙ্গল তাদেরকে স্পর্শ করবে না। আর তারা চিন্তিতও হবে না (সূরা আয যুমার:৬১)।
জান্নাত লাভে ধন্য হওয়া তাকওয়ার একটি ফযীলত। ইরশাদ হয়েছে :
{تِلْكَ الْجَنَّةُ الَّتِى نُورِثُ مِنْ عِبَادِنَا مَن كَانَ تَقِيّاً}
সেই জান্নাত, আমি যার উত্তরাধিকারী বানাব আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে যারা মুত্তাকী (সূরা মারয়াম:৬৩)।
আল্লাহ তাআলা আমাদের যথার্থরূপে তাকওয়া অর্জনের তাওফীক দান করুন।
بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِي الْقُرْآن الْعَظِيْمِ وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكُمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآياتِ وَالذِّكْر الحْكِيْمِ، أقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللهَ لِيْ وَلَكُمْ فَاسْتَغْفِرُوهُ إِنَّهُ هُو الْغَفُور الرَّحِيْمْ .
اَلْحَمُدُ لِلَّهِ الْوَاحِدِ الْأَحَدِ الْفَرْدِ الصَّمَدِ الَّذِيْ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ وَلَمْ يَكُن لَّه كُفُواً أَحَدٌ، وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى سَيِّدِنَا مُحَمَّدٍ خَيْرِ الْأَنَامِ وَعَلَى آلِه وَصَحَابَتِه الْكِرَام، أَمَّا بَعْدُ:
মুত্তিকীদের প্রতিদান
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! যারা মুত্তাকী আল্লাহ তাঁর রহমত-করুণা, সাহায্য ও সুরক্ষায় তাদের সাথে থাকেন। মুমিন ব্যক্তি এর থেকে বড় প্রতিদান আর কী আশা করতে পারে? ইরশাদ হয়েছে :
{إِنَّ اللَّهَ مَعَ الَّذِينَ اتَّقَوْا وَالَّذِينَ هُمْ مُحْسِنُونَ}
নিশ্চয় আল্লাহ তাদের সাথে, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে এবং যারা সৎকর্মশীল (সূরা আন নাহল:১২৮)।
তাকওয়া অবলম্বনকারীর আরেকটি প্রতিদান হলো, আকাশের বরকতসমূহ তার জন্য উন্মুক্ত হয়ে যাওয়া। ইরশাদ হয়েছে :
{وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِمْ بَرَكَاتٍ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَكِنْ كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُمْ بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ.}
আর যদি জনপদসমূহের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং তাকওয়া অবলম্বন করত তাহলে আমি অবশ্যই আসমান ও যমীন থেকে বরকতসমূহ তাদের উপর খুলে দিতাম কিন্তু তারা অস্বীকার করল। অতঃপর তারা যা অর্জন করত তার কারণে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম (সূরা আল- আরাফ:৯৬)।
মুত্তাকী ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তাআলা সমস্যাসঙ্কুল পরিবেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার পথ করে দেন। এবং এমনভাবে তার রিযকের ব্যবস্থা করেন যা সে কখনো কল্পনাও করেনি। ইরশাদ হয়েছে :
{وَمَنْ يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَلْ لَهُ مَخْرَجًا. وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ}
যে আল্লাহকে ভয় করে তিনি তার জন্য উত্তরণের পথ তৈরি করে দেন। এবং তিনি তাকে এমন উৎস থেকে রিযক দেবেন যা সে কল্পনাও করতে পারবে না (সূরা আত-তালাক: ২-৩)।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! আমরা যদি দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকামী হই, আমরা যদি আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান হওয়ার আগ্রহ রাখি, দুনিয়া ও আখিরাতের বিপদ থেকে রক্ষা পেতে চাই, জান্নাত লাভে ধন্য হতে চাই তবে তাকওয়া অবলম্বনের কোনো বিকল্প নেই। আর এ ক্ষেত্রে আমাদের সাধ্যের সবটুকুই ব্যয় করতে হবে। প্রাণান্তকর চেষ্টা করে যেতে হবে যথার্থরূপে নিজকে তাকওয়ার পথে পরিচালিত করার, তাকওয়ার চাদরে নিজকে আদ্যোপান্ত ঢেকে নেয়ার জন্য। ইরশাদ হয়েছে :
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ }
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, যথাযথ ভয় (সূরা আলে ইমরান:১০২)।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! তাকওয়া অবলম্বনের একটি বড় প্রতিদান হলো, আল্লাহ তাআলা মুত্তাকী ও সত্যবাদী ব্যক্তির সকল আমল দুরস্ত করে দেন। ইরশাদ হয়েছে :
{يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا. يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا.}
হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সঠিক কথা বল তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের কাজগুলোকে শুদ্ধ করে দেবেন এবং তোমাদের পাপগুলো ক্ষমা করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, সে অবশ্যই এক মহা সাফল্য অর্জন করল (সূরা আল আহযাব: ৭০)।
প্রিয় ভাই ও বন্ধুগণ! পশুপ্রবৃত্তির প্রবঞ্চনা থেকে বাঁচা, শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে রক্ষা পাওয়া, নাফসের খাহেশাত থেকে বাঁচা ইত্যাদির জন্য তাকওয়ার কোনো বিকল্প নেই। তাই আসুন আমরা পূর্ণাঙ্গরূপে মুত্তাকী হয়ে যাই। নিজদেরকে পরিপূর্ণরূপে তাকওয়ার চাদরে ঢেকে নিই। তাকওয়ামুখী জীবনযাপনকে জীবনের সর্বোচ্চ উদ্দেশ্য বলে সাব্যস্ত করি।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদের সবাইকে তাকওয়া অর্জনের তাওফীক দান করুন। আমাদের অন্তরের গভীরে আপনার তাকওয়া সদা জাগ্রত রাখুন। তাকওয়া-বিরোধী সকল কাজ থেকে আমাদের হিফাযত করুন। কুফর ও শিরক থেকে আমাদের হিফাযত করুন। শয়তানের ওয়াসওয়াসা থেকে আমাদের হিফাযত করুন।
হে আল্লাহ! আপনি বিশ্বের সকল মুসলমানকে যথার্থরূপে তাকওয়া ধারণের তাওফীক দান করুন। হে আল্লাহ মুসলিম বিশ্বের সকল শাসক ও নেতাদেরকে মুত্তাকী বানিয়ে দিন। তাকওয়ামুখী জীবনযাপনের তাওফীক দান করুন।
হে আল্লাহ! আমারা আপনার কাছে জান্নাত চাচ্ছি, আমাদের জন্য আপনি জান্নাতের ফয়সালা করুন। আমরা আপনার কাছে জাহান্নাম থেকে পানাহ চাচ্ছি, আমাদেরকে আপনি জাহান্নাম থেকে বাঁচান।
হে আল্লাহ আপনি আমাদের হায়াতে বরকত দিন। আমাদের রিযকে বরকত দিন। সকল প্রকার অকল্যাণ থেকে আপনি আমাদেরকে হিফাযত করুন। আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামীন।
عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ الله : ( إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.