islamkingdomfacebook islamkingdomtwitte islamkingdomyoutube


আল্লাহ তাআলার সুন্দর নামসমূহের প্রতি ঈমান ও কয়েকটি নামের ব্যাখ্যা


6913
পাঠ সংক্ষেপ
আল্লাহ তায়ালার নাম ও গূনাবলীসমূহের প্রতি ঈমান রাখা ইসলামের অন্যতম মহান মৌলিক বিষয় এবং বান্দাহর জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম কারন।আল্লাহ তায়ালা স্বীয় সুন্দর নাম ও গূনাবলীসমূহ দ্বারা দোয়া ও মোনাজাত করার জন্য বান্দাহকে উৎসাহিত করেছেন।এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের উচিত এসব নাম ও গূণাবলীসমূহ শেখা এবং এগুলোর অর্থ বুঝা।

اَلْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَمَرَنَا بِدُعَائِهِ بِأَسْمَائِهِ الْحُسْنَى وَأَشْهَدُ أَن لَّا إِلهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ، أَمَّا بَعْدُ :

সুন্দর তুমি হে আমার রব

সুন্দর তোমার নাম

দুআ মুনাজাতে চাহি তাই আমি

তোমারই ক্ষমা সুবহো-শাম।

মুহতারাম হাযেরীন! আল্লাহর নাম সমগ্র অতি চমৎকার, মধুময়, অনন্য। তবে শুধু এতটুকু বললেই আমাদের দায়িত্ব আদায় হবে না। বরং আমাদের প্রয়োজন আল্লাহর নামগুলোর প্রতি যথার্থরূপে ঈমান আনা, বিশ্বাস স্থাপন করা। এক্ষেত্রে সকল প্রকার বিকৃতি (তাহরীফ), অর্থ পরিবর্তন (তাওয়ীল),সাদৃশ্য স্থাপন (তাশবীহ), উদাহরণ নিরূপণ (তামছীল), অথবা বাতিলকরণ (তা*তীল), অথবা রূপ নিরূপণ (তাকয়ীফ) থেকে বেঁচে থাকা আমাদের জন্য খুবই জরুরি।

আল্লাহ তাআলার রয়েছে সুন্দরতম নামসমগ্র। এ ব্যাপারে আল কুরআনে স্পষ্ট ভাষায় এসেছে:

{وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا}

আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে তা দিয়েই ডাক (আল আরাফ:১৮০)

প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আল্লাহর নামসমগ্রের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয়ে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। কেননা এক্ষেত্রে ভুল করার অর্থ ঈমান ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ভুল করা। আর ঈমান ও বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ভুল মারাত্মক ভুল, অমার্জনীয় ভুল। তাই আসুন বিষয়টি ভাল করে জেনে নিই।

এক. আল্লাহর নামগুলো কেবল কুরআন সুন্নাহ থেকে আহরণ করতে হবে। এক্ষেত্রে নিজের বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করে নতুন কোনো নাম আল্লাহর উপর আরোপ করা কখনো সঙ্গত হবে না। কুরআন হাদীসে যতটুকু পাওয়া যায় ততটুকুতেই সীমিত থাকতে হবে। বাড়ানোও যাবে না, কমানোও যাবে না। কেননা বিবেক-বুদ্ধি দিয়ে মহান আল্লাহর তাআলার শানের উপযোগী নাম আবিষ্কার করা মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। এ কারণেই এক্ষেত্রে কুরআন হাদীসের পাঠ্যের বাইরে গিয়ে নবআবিষ্কৃত কোনো নামে আল্লাহকে ডাকার অর্থ হবে প্রকাশ্য সীমালঙ্ঘন। ইরশাদ হয়েছে-

{وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ إِنَّ السَّمْعَ وَالْبَصَرَ وَالْفُؤَادَ كُلُّ أُولَئِكَ كَانَ عَنْهُ مَسْئُولًا}

আর যে বিষয় তোমার জানা নেই তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয় কান, চোখ, ও অন্তঃকরণ- এদের প্রত্যেকটির ব্যাপারে কৈফিয়ত তলব করা হবে (সূরা আল ইসরা:৩৬)

দুই. আল্লাহর নামসমূহ সুনির্দিষ্ট কোনো সংখ্যায় সীমিত নয়। প্রসিদ্ধ একটি হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি আপনার কাছে প্রর্থনা করছি প্রত্যেক নামের উসিলায় যা কেবল আপনার, যে নাম আপনি নিজেকে দিয়েছেন, অথবা আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন, অথবা আপনার সৃষ্টিকুলের মধ্যে কাউকে শিখিয়েছেন, অথবা আপনার ইলমে গায়েবে রেখে দিয়েছেন (আহমদ ও হাকেম)।

আর আল্লাহ তাআলা তার ইলমে গায়েবে যা সংরক্ষিত করে রেখে দিয়েছেন তা জানা অথবা আয়ত্তে আনা কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়।

সহীহ বুখারী ও মুসলিমে আল্লাহর নিরানব্বইটি নামের কথা রয়েছে যেগুলো কেউ সংরক্ষণ করলে, ভালোভাবে বুঝলে, সে নামগুলো উল্লেখ করে দুআ করলে জান্নাতে প্রবেশের ঘোষণা রয়েছে। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, আল্লাহর নাম কেবল এই নিরানব্বইটিতেই সীমিত। বুখারী ও মুসলিমের হাদীসের অর্থ হল, কেউ যদি কেবল নিরানব্বইটি নাম উল্লিখিতভাবে সংরক্ষণ করতে পারে তবে তার জন্য জান্নাতের ঘোষণা রয়েছে।

তিন. আল্লাহর নাম সবগুলোই সুন্দরতম, মাধুর্যমণ্ডিত। ইরশাদ হয়েছে :

{وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا}

আল্লাহর রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। তোমরা তাঁকে তা দিয়েই ডাক (আল আরাফ:১৮০)

আল্লাহর কিছু নামের অর্থ ও ব্যাখ্যা-

الله : মহব্বত ও তাযীম মিশ্রিত হৃদয়ে ইলাহ ও মাবুদ হিসেবে যার প্রতি সৃষ্টিকুল ধাবিত হয়।

الرَّحْمنُ الرَّحِيْم : করুণাময় পরম দয়ালু। মা তার সন্তানের প্রতি যতটুকু দয়া দেখায় তার চেয়েও অধিক দয়ালু আল্লাহ তাআলা তার বান্দাদের প্রতি। যা কিছু নেয়ামত এ পৃথিবীতে রয়েছে সবই তাঁর রহমতের বদৌলতে। সকল প্রকার বিপদ ও দুর্যোগ থেকে মুক্তি ও পরিত্রাণ আল্লাহর রহমতের বদৌলতেই হয়ে থাকে। ইরশাদ হয়েছে:

{وَمَا بِكُمْ مِنْ نِعْمَةٍ فَمِنَ اللَّهِ }

আর তোমাদের কাছে যেসব নিয়ামত আছে তা আল্লাহর পক্ষ হতে (সূরা আন-নাহল: ৫৩)

الْمَلِك: সমগ্র মহাবিশ্বের মালিক। ঊর্ধ্বজগৎ-নিম্নজগৎ সবকিছুরই তিনি মালিক। আল্লাহর জ্ঞান ও ইরাদার বাইরে আকাশ ও পৃথিবীর কোনো কিছু নড়াচড়া করে না। ইরশাদ হয়েছে

{قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَنْ تَشَاءُ وَتَنْزِعُ الْمُلْكَ مِمَّنْ تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَنْ تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَنْ تَشَاءُ بِيَدِكَ الْخَيْرُ إِنَّكَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ}

বল, হে আল্লাহ, রাজত্বের মালিক, আপনি যাকে চান রাজত্ব দান করেন, আর যার থেকে চান রাজত্ব কেড়ে নেন এবং আপনি যাকে চান সম্মান দান করেন। আর যাকে চান অপমানিত করেন, আপনার হাতেই কল্যাণ। নিশ্চয় আপনি সব কিছুর উপর ক্ষমতাবান ।(সূরা আল ইমরান: ২৬)

اَلْقُدُّوْسُ : অর্থাৎ যিনি সকল দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত। তিনি সকল সৃষ্টিকে অস্তিত্বে এনেছেন, সৃষ্টি করেছেন অথচ কোনো ক্লান্তি-শ্রান্তি তাঁকে স্পর্শ করেনি। ইরশাদ হয়েছে-

{وَلَقَدْ خَلَقْنَا السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ وَمَا بَيْنَهُمَا فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ وَمَا مَسَّنَا مِنْ لُغُوبٍ}

নিশ্চয় আমি আসমানসমূহ ও যমীন এবং এতদোভয়ের মধ্যস্থিত সবকিছু ছয় দিনে সৃষ্টি করেছি। আর আমাকে কোনোরূপ ক্লান্তি স্পর্শ করেনি (সূরা কাফ:৩৮)

الْقَوِيُّ ، الْقَهَّارُ: মহাশক্তিধর, মহাপরাক্রমশালী: এমন কোনো সৃষ্টি নেই, যা আল্লাহর শক্তি ও পরাক্রমশালিতার অধীন নয়। সবই বরং তাঁর কাছে নত। সবই তাঁর অধীন ও তাঁর সামনে অসহায়। ইরশাদ হয়েছে-

{وَمَا قَدَرُوا اللَّهَ حَقَّ قَدْرِهِ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ}

তারা আল্লাহর যথাযথ মর্যাদা উপলব্ধি করে না, নিশ্চয় আল্লাহ মহাক্ষমতাবান, মহাপরাক্রমশালী (সূরা আল হাজ্জ:৭৪)

الْعَلِيْمُ : সর্বজ্ঞাত: যিনি গোপন ও প্রকাশ্য সবকিছুই উত্তমরূপে জানেন। জলে-স্থলে যা কিছু আছে সবকিছু সম্পর্কে যিনি সুপরিজ্ঞাত। এমনকি কোনো বৃক্ষের পাতা খসে পড়লেও তিনি তা জানেন। যমীনের অন্ধকারতম স্থানে, কোনো আর্দ্র অথবা শুকনো জায়গায় যা কিছুই নিপতিত হয়, তা রয়েছে সুস্পষ্ট কিতাবে।

الْعَلِيُّ الأَعْلَى : যিনি সর্বোর্ধ্ব, সর্বশীর্ষ : তিনি তার সত্তার দিক থেকে সর্বোর্ধ্বে, আরশের উপরে এবং তাঁর গুণাবলীর দিক থেকেও সর্বোর্ধ্বে ও সর্বশীর্ষে।

الْجَبَّارُ : মহা প্রতাপশালী: যিনি দুর্বল ও ভঙ্গুরকে সাহায্য করেন। শক্তিমানকে স্তব্ধ করেন।

الْغَفُورُ : পরম ক্ষমাশীল: যিনি সকল পাপ ক্ষমা করে দেন, যিনি বান্দার দোষ-ত্রুটি গোপন করেন।

الْحَكِيْمُ : প্রজ্ঞাময়: যিনি তাঁর বিধিবিধানে, ও সৃষ্টিজীবের ভাগ্য নির্ণয়নে প্রজ্ঞাময়।

الْغَنِيُّ : অমুখাপেক্ষী: যিনি তাঁর সকল মাখলুক থেকে মুখাপেক্ষিহীন। কারও কাছে তিনি কোনো কিছুর জন্যেই মুখাপেক্ষী নন।

الْجَمْيلُ : সুন্দর: আল্লাহ তাআলা সুন্দর এবং সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন। হাদীসে এসেছে:

إنَّ اللهَ جَمِيْلٌ يُحِبُّ الْجَمَالَ নিশ্চয় আল্লাহ সুন্দর এবং সৌন্দর্যকে পছন্দ করেন।

মুহতারাম শ্রোতামণ্ডলী! আল্লাহর নামসমূহের প্রতি ঈমানের একটি দাবি হল, এ নামগুলোর মাধ্যমে আল্লাহকে ডাকা, আল্লাহর কাছে দুআ করা ইবাদাত ও প্রার্থনা উভয় প্রকারের দুআ। ইবাদাতের দুআর অর্থ এ নামগুলো পড়ার মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদাত করা। আর প্রার্থনার দুআর অর্থ এ নামগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে কোনো কিছু চাওয়া।

(وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا)

আয়াতটি এদিকেই ইঙ্গিত করছে। এ বিষয়ে হাদীসেও স্পষ্ট নির্দেশনা এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তিকে এই বলে দুআ করতে শুনলেন

(اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِأَنَّ لَكَ الْحَمْدَ، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ وَحْدَكَ، لَا شَرِيكَ لَكَ، الْمَنَّانَ بَدِيعَ السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، ذَا الْجَلَالِ وَالْإِكْرَامِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: لَقَدْ سَأَلْتَ اللَّهَ بِاسْمِ اللَّهِ الْأَعْظَمِ، الَّذِي إِذَا دُعِيَ بِهِ أَجَابَ، وَإِذَا سُئِلَ بِهِ أَعْطَى ')

হে আল্লাহ ! আমি আপনার কাছে এই বলে প্রার্থনা করছি যে, আপনার জন্যই প্রশংসা, আপনি ছাড়া অন্য কোনো ইলাহ নেই। আপনি একক, আপনার কোনো শরীক নেই। আপনি অতি দয়াশীল। আসমানসমূহ ও যমীনের স্রষ্টা। আপনি মর্যাদাবান ও সম্মানের পাত্র। হে চিরঞ্জীব, হে সকল সত্তার ধারক। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: তুমি ইসমে-আযমের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছ, যার দ্বারা ডাকলে আল্লাহ সাড়া দেন, যার দ্বারা প্রার্থনা করলে তিনি দান করেন(আহমদ, হাসান)।

প্রিয় মুসল্লিয়ান! আল্লাহর নামের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে আর্জি পেশ করুন। বিষয়বস্তু অনুযায়ী আল্লাহর নাম বেছে নিন। আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনার ক্ষেত্রে বলুন

يَا غَفُوْرُ اغْفِرْ لِيْ

হে অতি ক্ষমাশীল! আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। এ রকম বলবেন না যে, হে শাস্তিদানে কঠোর, আমাকে ক্ষমা করুন। কেননা এরূপ বলায় প্রকারান্তরে আল্লাহর সাথে ঠাট্টা করা হয়।

شِدِيْدُ الْعِقَابِ

বা শাস্তিদানে কঠোর এই নাম ব্যবহার করলে তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে হবে, বলতে হবে: হে শাস্তিদানে কঠোর ! আপনার শাস্তি থেকে আমাকে রক্ষা করুন।

بَارَكَ اللهُ لِيْ وَلَكُمْ فِيْ الْقُرآنِ اْلَعَظِيْم وَنَفَعَنِيْ وَإِيَّاكْمْ بِمَا فِيْهِ مِنَ الْآيَاتِ وَالذِّكْرِ الْحَكِيْمِ،

أَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمْ : وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى فَادْعُوهُ بِهَا وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ. أَقُوْلُ قَوْلِيْ هَذَا وَأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ لِي

الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَمَرَنَا بِدَعْوَتِهِ بِأَسْمَائِهِ الْحُسْنَىْ، وَالصَّلاةُ وَالسَّلامُ عَلَى رَسُوْلِ اللهِ وَعَلَى آلِهِ وَصَحْبِهِ أَجْمَعِيْنَ، أَمَّا بَعْدُ:

প্রিয় মুসলিম ভাইয়েরা! আল্লাহর নামগুলো জানার ব্যাপারে আপনারা কেবল আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহর আশ্রয় নিন। কেননা আল্লাহ তাআলা নিজকে যে নাম দেননি, বা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে নামে আল্লাহকে ডাকেননি, তা আল্লাহর উপর প্রয়োগ করা প্রকাশ্য ধৃষ্টতা। কেননা আল্লাহর নামগুলো কেবলই কুরআন-সুন্নাহ নির্ভর। এক্ষেত্রে নতুন কিছু আবিষ্কার করা ঈমানবিরুদ্ধ। আল কুরআনুল

কারীম আল্লাহর নাম ও গুণাবলীতে ভরপুর। যেমন

{هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ ، هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ، هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ : هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ ، هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ، هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ : هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ ، هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ، هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَى يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ}

তিনিই আল্লাহ, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই দৃশ্য-অদৃশ্যের জ্ঞাতা তিনিই পরম করণাময়, দয়ালু। তিনিই আল্লাহ যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনিই বাদশাহ, মহাপবিত্র, ত্র&ldquoটিমুক্ত, নিরাপত্তাদানকারী, রক্ষক, মহাপরাক্রমশালী, মহাপ্রতাপশালী, অতীব মহিমান্বিত, তারা যা শরীক করে তা হতে পবিত্র-মহান। তিনিই আল্লাহ, স্রষ্টা, উদ্ভাবনকর্তা, আকৃতিদানকারীতাঁর রয়েছে সুন্দর নামসমূহ আসমান ও যমীনে যা আছে সবই তার মহিমা ঘোষণা করে। তিনি মহাপরাক্রমশারী, প্রজ্ঞাময় (সূরা আল হাশর:২২-২৪)

অন্য এক আয়াতে এসেছে-

{قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ ، اللَّهُ الصَّمَدُ ، لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ ، وَلَمْ يَكُنْ لَهُ كُفُوًا أَحَد}

বল, তিনিই আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী নন, সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং তাঁকেও জন্ম দেয়া হয়নি। আর তাঁর কোনো সমকক্ষও নেই (সূরা আল ইখলাস)

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে দুআ করতেন। যেমন তাহাজ্জুদের সময় এই দুআটি পড়তেন বলে ইবনে আব্বাস রাযি. বর্ণনা করেছেন-

(اللَّهُمَّ لَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ نُورُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ قَيَّامُ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَلَكَ الْحَمْدُ، أَنْتَ رَبُّ السَّمَوَاتِ وَالأَرْضِ، وَمَنْ فِيهِنَّ أَنْتَ الْحَقُّ، وَوَعْدُكَ الْحَقُّ، وَقَوْلُكَ الْحَقُّ، وَلِقَاؤُكَ حَقٌّ، وَالْجَنَّةُ حَقٌّ، وَالنَّارُ حَقٌّ، وَالسَّاعَةُ حَقٌّ، اللَّهُمَّ لَكَ أَسْلَمْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَعَلَيْكَ تَوَكَّلْتُ، وَإِلَيْكَ أَنَبْتُ، وَبِكَ خَاصَمْتُ، وَإِلَيْكَ حَاكَمْتُ، فَاغْفِرْ لِي مَا قَدَّمْتُ وَأَخَّرْتُ وَأَسْرَرْتُ وَأَعْلَنْتُ، أَنْتَ إِلَهِي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ)

হে আল্লাহ! আপনারই প্রশংসা। আপনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর জ্যোতি। আপনারই প্রশংসা। আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর আপনি ধারক। আপনারই প্রশংসা। আপনি আকশমণ্ডলী ও পৃথিবী ও তাতে যা রয়েছে তার রব। আপনি সত্য। আপনার ওয়াদা সত্য। আপনার কথা সত্য। আপনার সঙ্গে সাক্ষাৎ সত্য। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। কিয়ামত সত্য। হে আল্লাহ! আপনার কাছেই আত্মসমর্পণ করেছি। আপনার প্রতিই ঈমান এনেছি। আপনার উপরই নির্ভর করেছি। আপনার দিকেই ফিরে এসেছি। আপনার জন্য বিবাদ করেছি। আপনাকেই বিচারক মেনেছি। অতএব আপনি আমার পূর্ব ও পরের গোপন ও প্রকাশ্য পাপগুলো ক্ষমা করে দিন। আপনি আমার ইলাহ। আপনি আপনি ছাড়া কোনো ইলাহ নেই (বুখারী ও মুসলিম)।

অন্য এক হাদীসে এসেছে,

سَيِّدُ الِاسْتِغْفَارِ

তথা ক্ষমাপ্রার্থনার সেরা বাক্যমালা হল-

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي، لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ، قَالَ: وَمَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوقِنًا بِهَا فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ وَهُوَ مُوقِنٌ بِهَا فَمَاتَ قَبْلَ أَنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ

সেরা ইস্তেগফার হল, তুমি বলবে, হে আল্লাহ! আপনি আমার রব। আপনি ছাড়া সত্যিকার কোনো মাবুদ নেই। আপনিই আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার বান্দা। আপনার সঙ্গে কৃত-ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতির উপর আমি আমার সাধ্যমত অটল রয়েছি। আমি যা কিছু করেছি তার অপকারিতা হতে আপনার আশ্রয় নিচ্ছি। আমার প্রতি আপনার যে নিআমত তা স্বীকার করছি। আর স্বীকার করছি আপনার কাছে আমার অপরাধ। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন। কারণ আপনি ছাড়া আর কেউ ক্ষমা করতে পারে না।

যে সকালবেলায় দৃঢ় বিশ্বাসে এটা পাঠ করবে, সে যদি ওই দিন সন্ধ্যার পূর্বে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যদি দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে সন্ধ্যায় পাঠ করে এবং সকাল হওয়ার পূর্বে সে ইন্তেকাল করে তাহলে সে জান্নাতবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে (বুখারী)

মুসল্লিয়ানে কেরাম! আল্লাহর নামের ক্ষেত্রে অবশ্যই কুরআন সুন্নাহর আশ্রয় নেবেন। আল্লাহ তাআলা নিজেকে যে নাম দেননি, অথবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইি ওয়া সাল্লাম যে নামে তাঁকে ডাকেননি সে নাম কখনো আল্লাহর প্রতি প্রয়োগ করবেন না। এ ব্যাপারে অতিমাত্রায় সতর্ক থাকুন। কেননা এরূপ করার অর্থ হবে আল্লাহর ব্যাপারে মনগড়া কথাবার্তা বলা, যা আল কুরআনের বক্তব্য অনুযায়ী পুরোপুরি নিষিদ্ধ। ইরশাদ হয়েছে

{قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ}

বল, আমার রব তো হারাম করেছেন অশ্লীল কাজ- যা প্রকাশ পায় এবং যা গোপন থাকে, আর পাপ ও অন্যায়ভাবে সীমালঙ্ঘন এবং আল্লাহর সাথে তোমাদের শরীক করা, যে ব্যাপারে আল্লাহ কোনো প্রমাণ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর উপরে এমন কিছু বলা যা তোমরা জান না (সূরা আল আরাফ:৩৩)

অন্য এক আয়াতে, যে বিষয়ে সঠিক জ্ঞান নেই, সে বিষয়ে কথা বলা বা অনুসরণ করা থেকে আল্লাহ তাআলা নিষেধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে:

{وَلَا تَقْفُ مَا لَيْسَ لَكَ بِهِ عِلْمٌ }

আর যে বিষয় তোমার জানা নেই তার অনুসরণ করো না (সূরা:আল ইসরা:৩৬)

মুহতারাম শ্রোতামণ্ডলী! আল্লাহর নামগুলোর উপর আমরা সবাই যথার্থরূপে ঈমান আনি। এক্ষেত্রে আমাদের ঈমানকে পরিশুদ্ধ করি। আল্লাহর নামের প্রতি ঈমানের দাবি অনুযায়ী আমল করি। আর আল্লাহকে ভয় করার মতো ভয় করি। যথার্থরূপে তাকওয়া অবলম্বন করি। কেননা আমরা আজ হোক কাল হোক আল্লাহর কাছেই প্রত্যাবর্তন করব। তাই আসুন, আমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নতকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরি। আল্লাহর নাম ও সিফাত উল্লেখ করে আল্লাহর কাছে দুআ করি। প্রার্থনা করি। কেননা যারা এক্ষেত্রে গর্ব ও অহংকারভরে বিরত থাকে তারা জাহান্নামী হবে বলে আল্লাহ তাআলা সতর্ক করে দিয়েছেন। আর কুরআন সুন্নাহ-এ আল্লাহ তাআলার যেসব নাম উল্লিখিত হয়েছে সেগুলোর অর্থ বোঝার চেষ্টা করি। আল্লাহর নামগুলো সুন্দরতম নাম। এগুলোর অর্থও খুব চমৎকার ও সূক্ষ্ম।

اَللَّهُمَّ صَلِّ وَسَلِّمْ وَبَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ كَمَا صَلَّيْتَ وَبَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيْمَ إِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ وَارْضَ اللَّهُمَّ عَنِ الْخُلَفَاءِ الرَّاشِدِيْنَ وَعَنْ آلِ نَبِيِّكَ الطَّيِّبِيْنَ الطَّاهِرِيْنَ وَعَنْ أَزْوَاجِهِ أُمُّهَاتِ الْمُؤْمِنِيْنَ وَعَنِ الصَّحَابَةِ أَجْمَعِيْنَ وَعَنِ التَّابِعِيْنَ وَمَنْ تَبِعَهُمْ بِإِحْسَانٍ إِلَى يَوْمِ الدِّيْنِ وَعَنَّا مَعَهُمْ بِمَنِّكَ وَكَرَمِكَ وَعَفْوِكَ وَإِحْسَانِكَ يَا أَرْحَمَ الْرَّاحِمِيْنَ.

হে আল্লাহ!আপনি আমাদেরকে আপনার সুন্দর নাম ও গুণাগুণ সম্পর্কে সঠিক ধারণা অর্জন করার তাওফীক দান করুন। এক্ষেত্রে সকল ভুলত্রুটি থেকে আমাদেরকে হিফাযত করুন। আপনার সুন্দর নামগুলোর মাধ্যমে আপনাকে ডাকার তাওফীক দান করুন। আপনার সুন্দর নামগুলো যাতে সঠিক অর্থে সংরক্ষণ করে জান্নাতে প্রবেশের উপযোগী হতে পারি সেই তাওফীক আমাদেরকে দান করুন।

হে আল্লাহ!মুসলিম উম্মাহর উপর থেকে সকল প্রকার বালা-মুসীবত উঠিয়ে নিন। মুসলিম উম্মাহর উপর আপনার খাস রহমত নাযিল করুন। হে আল্লাহ!আপনি আমাদের সবাইকে সঠিক অর্থে মুত্তাকী হবার তাউফীক দান করুন,পরহেজগার বানিয়ে দিন। আমাদের পরিবার পরিজনকে আপনার সন্তুষ্টি ও রেযামন্দীর পথে পরিচালিত করুন। হে আল্লাহ মুসলিম বিশ্বের সরকার প্রধানদেরকে আপনার রেযামন্দী অন্বেষণের তাওফীক দান করুন। আপনার শরীয়ত ও বিধান বাস্তবায়নের তাওফীক দান করুন। তাওহীদকে সমুন্নত করার তাওফীক দান করুন। আমীন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

عبَادَ اللهِ رَحمِكُمُ اللهِ: ( إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ والإحْسَانِ وَإيْتَاءِ ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالمْنْكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُوْنِ ) اُذْكُرُوا اللهَ يَذْكُرْكُمْ وَادْعُوْهُ يَسْتجِبْ لَكُمْ وَلَذِكْرُ اللهِ تَعَالَى أَعْلَى وَأَعْظَمُ وَأَكْبَرُ.